ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার নিয়ম – Cancel NID Application
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে যেয়ে ভুল করে নতুন করে ভোটার আবেদন করে ফেলেছেন? কিভাবে আবেদন বাতিল করবেন জানেন না? আজকের এই পোস্টে আমরা জানবো কিভাবে নতুন ভোটার আইডি কার্ড আবেদন বাতিল করবেন।
ব্যাক্তি অনেক সময় ভোটার আইডি কার্ডে নাম, ঠিকানা ইত্যাদি সংশোধন করতে যেয়ে নতুন করে ভোটার আবেদন করে ফেলে। যদি ভুল করে একাধিক ভোটার আবেদন করা হয়ে যাই তবে যত দ্রুত সম্ভব তা বাতিল করা উচিৎ। কারন একাধিকবার ভোটার আবেদন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
দ্বৈত ভোটার হলে বা ভুল বয়স দেখিয়ে ভোটার আবেদন করা আইনত অপরাধ। এমন কেও ভুল করে করে থাকলে নির্বাচন কমিশন এর কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন বাতিল করতে হয়।
আবেদন বাতিল না করলে পরবর্তীতে বায়োমেত্রিক্স তথ্য চেক করার সময় যদি ব্যাক্তি ধরা পরে তবে জেল এবং অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
আজকের পোস্টে দৈত্ত্ব ভোটার হলে অথবা ভুল করে একাধিক বার ভোটার আবেদন করে ফেললে কিভাবে আবেদন বাতিল করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
কেনো ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন বাতিল করতে হয়?
জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদন করার সময় ভুল তথ্য প্রদান করলে অথবা অবৈধভাবে দৈত্ত্ব ভোটার হলে ভোটার কার্ডের আবেদন বাতিল করতে হয়। বোঝার সুবিধার্থে নিম্নে যে যে ক্ষেত্রে ভোটার আবেদন বাতিল করার প্রয়োজন হতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. দৈত্ব ভোটার অর্থাৎ একাধিকবার ভোটার আবেদন করলে
ভোটার আইডি কার্ড এর বিভিন্ন তথ্য সংশোধন এর সময় ভুল করে দ্বিতীয়বার ভোটার আবেদন করে ফেললে একটি আবেদন অবশ্যই বাতিল করতে হবে। আবেদন বাতিল করার জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসে ক্ষমা প্রার্থনা করে ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন বাতিল করার জন্য লিখিত আবেদন জমা দিতে হয়।
মনে রাখবেন একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র একবার ভোটার আবেদন করতে পারবে। যদি কেও ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুল করে দৈত্ত্ব ভোটার হয় এবং তা সংশোধন না করে ধরা পরে তবে তার বিরুদ্ধে আইনত শাস্তি এবং জরিমানার ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
তাছাড়া বর্তমানে ভোটার আবেদন করতে হলে বায়োমেট্রিক্স তথ্য প্রয়োজন হয়। বায়োমেট্রিক্স তথ্য দেয়ার সময় কেও পূর্বে ভোটার হয়ে থাকলে ধরা পরে যাবে। এজন্য আমাদের উচিত দৈত্ত্ব ভোটার হয়ে থাকলে তা যত দ্রুত সম্ভব বাতিল করা।
২. কম বয়সে ভোটার হলে
নিজের বয়স সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অর্থাৎ কম বয়সে বয়স অবৈধভাবে বাড়িয়ে ভোটার আবেদন করাও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অনেকে আছে যারা বিভিন্ন কারণে বয়স অবৈধভাবে বাড়িয়ে ভোটার আবেদন করে।
যারা এমন করে তাদের ভবিষ্যতে শিক্ষা সনদ, পাসপোর্ট ইত্যাদি করার সময় বয়সে গরমিল দেখা যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভুল ভোটার আবেদনটি বাতিল করতে হবে।
নাম পরিবর্তন করে ভোটার আবেদন করলে
অনেকে চাকরি পাওয়ার জন্য অন্য কারোর সার্টিফিকেট ব্যবহার করে নিজের নাম পরিবর্তন করে করে ভোটার হয়। এভাবে ভুল নাম ব্যবহার করে ভোটার নিবন্দিত হলে পরবর্তীতে পাসপোর্ট, শিক্ষা সনদ, সন্তানের জন্ম নিবন্ধন ইত্যাদি কাগজপত্রে নাম নিয়ে সমস্যা হয়।
এজন্য পরবর্তীতে আবার নির্বাচন অফিসে যেতে হয়। ভোটার আইডি কার্ডের সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন করা এমনিতেই ঝামেলাপূর্ণ। তাছাড়া এজন্য বিভিন্ন কাগজপত্রেরও প্রয়োজন হয়। উপযুক্ত কাগজপত্র না থাকলে নাম পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র বাতিল করতে হয়।
ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন বাতিল করতে কি কি লাগে
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য প্রথমেই নির্বাচন কপিসনের অফিসে একটি লিখিত আবেদন পত্র জমা দিতে হবে। এই আবেদন এর সাথে অন্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও প্রয়োজন হবে। বোঝার সুবিধার্থে ভোটার আইডি কার্ড আবেদন বাতিল করার জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে নিম্নে তার একটি বিস্তারিত তালিকে দেওয়া হলো :-
- আসল ভোটার আইডি কার্ড
- জন্ম নিবন্ধন এর কপি
- ব্যাক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা পাসপোর্ট এর কপি
- বাতিলকৃত ভোটার আইডি কার্ড ( সম্ভব হলে )
- যেই আইডি কার্ডটি বাতিল করতে চান তার কপি ( সম্ভব হলে )
যেভাবে ভোটার আইডি কার্ডটি বাতিল করবেন
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজেই আপনি আপনার ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার আবেদন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিসনের ওয়েবসাইট থেকে আরো কি কি সেবা পেতে পারেন তা জানা নাও থাকতে পারে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আরো পড়তে পারেন – NID বিষয়ক সকল সেবা যেভাবে পাবেন।
ভোটার আইডি কার্ড আবেদন বাতিল করা একটি সময় সাপেক্ষ কাজ। আবেদন বাতিল করার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির আবেদন সক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। বোঝার সুবিধার্থে ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার পদ্ধতি নিম্নে ধাপে ধাপে দেখানো হলো। ধাপ গুলো নিম্ন রূপ :-
- ধাপ ১ – বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জেলা অফিসার বরাবর ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য লিখিত আবেদন জমা দিন।
- ধাপ ২ – লিখিত আবেদনটির সাথে যেই আইডি কার্ডটি বাতিল করতে চান তার কপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন
- ভোটার আইডি কার্ড আবেদন ফি পরিষদ করে প্রাপ্ত রশিদটি লিখিত আবেদন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে জমা দিন।
ধাপ ১ – ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য লিখিত আবেদন করা
আবেদনটি বাতিল করার জন্য প্রথমেই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য লিখিত আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদনটি হাতে না লিখে কম্পিউটারে লিখা উচিৎ।
লিখিত আবেদনটির সাথে যেই আইডি কার্ডটি বাতিল করতে চান তার নাম্বার যুক্ত করতে হবে। একইসাথে যেই আইডি কার্ডটি সঠিক অর্থাৎ ভবিস্যতে ব্যবহার করতে চান সেই আইডি কার্ডটির নাম্বার যুক্ত করুন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যুক্ত করা সম্পূর্ণ হলে কি কি কাগজপত্র যুক্ত করেছেন লিখিত আবেদনে তাও লিখে দিতে হবে।
আপনার লিখিত আবেদনটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করলে জানতে পারবেন। আবেদনটি গ্রহণ করা হলে ভুল আইডি কার্ডটি এবং যেই আইডি কার্ডটি ভবিস্যতে ব্যবহার করতে চান তার একটি কপি জমা দিতে হবে।
ধাপ ২ – আবেদনকারির পরিচয় নিশ্চিত করা
ভোটার আইডি কার্ডটি বাতিল করার জন্য আবেদনকারির পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। আবেদনকারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রমান পত্র হিসেবে জাতীয় পরিচয় পত্র ( NID ) কার্ড প্রয়োজন হবে। তা না থাকলে জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা শিক্ষা সনদের প্রয়োজন হবে।
ধাপ ৩ – ভোটার আইডি কার্ড বাতিল আবেদন ফি পরিষদ করা
জাতীয় পরিচয় পত্র অর্থাৎ ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য নির্দিষ্ট আবেদন ফি পরিষদ করতে হবে। আবেদন ফি আবেদনটি জমা দেওয়ার সময় পরিষদ করতে হয়।
আবেদন ফি পরিষদ সম্পূর্ণ হলে যেই ভোটার আইডি কার্ডটি বাতিল করবেন তা যাচাই করে সেটি বাতিল করতে পারেন। কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড যাচাই করবেন জানা না থাকলে পড়তে পারেন – কিভাবে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই করবেন
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে কত সময় লাগে
সাধারণভাবে আবেদন গ্রহণ করার ১ মাসের মধ্যে আবেদন বাতিল হয়ে যায়। তবে মাঝে মাঝে ক্ষেত্র বিশেষে ২ – ৩ মাস সময়ও লাগতে পারে।
আবেদন সঠিক ভাবে করা হলে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিয়ে থাকলে এবং আবেদনের কারণ সঠিক অর্থাৎ বৈধ হলে ১ মাসের মধ্যেই ভোটার আইডি কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা।
দৈত্ব ভোটার নিবন্ধনের আইনত দণ্ড অর্থাৎ জরিমানা
কেও যদি ভুলবশত অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন যেমন নাম বা বয়স পরিবর্তন করে একাধিকবার ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করে এবং তা পরবর্তীতে সংশোধন না করে তবে এজন্য শাস্তি এবং জরিমানা গুনতে হবে।
দৈত্ত্ব ভোটার হলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং ৬ মাসের কারাদণ্ড এমনকি উভয় দণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।
শেষ কথা
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি, কেন এবং কিভাবে ভোটার আইডি আবেদন বাতিল করার প্রয়োজন হয় । আমারা ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি যা আপনাকে সহজেই ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার আবেদন লিখতে সাহায্য করবে।
আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে আরো নতুন পোস্ট করতে চান তাহলে ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন। এবং আপনি আপনার মূল্যবান মতামত বা কোন প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্টে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
FAQ’s
NID কার্ড আবেদন বাতিল করার জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে নিম্নে তার একটি বিস্তারিত তালিকে দেওয়া হলো :- আসল NID কার্ড, জন্ম নিবন্ধন এর কপি, ব্যাক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা পাসপোর্ট এর কপি, বাতিলকৃত NID কার্ড ( সম্ভব হলে ) ,যেই আইডি কার্ডটি বাতিল করতে চান তার কপি ( সম্ভব হলে )
সাধারণভাবে আবেদন গ্রহণ করার ১ মাসের মধ্যে আবেদন বাতিল হয়ে যায়। তবে মাঝে মাঝে ক্ষেত্র বিশেষে ২ – ৩ মাস সময়ও লাগতে পারে।
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে সাধারণভাবে ১০০ – ৫০০ টাকা পর্যন্ত প্রয়োজন হয়।
সাধারণভাবে আবেদন গ্রহণ করার ১ মাসের মধ্যে আবেদন বাতিল হয়ে যায়। তবে মাঝে মাঝে ক্ষেত্র বিশেষে ২ – ৩ মাস সময়ও লাগতে পারে।