ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম ২০২৪ – NID Form 13
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা কি সম্ভব? কিভাবে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করবেন? ভোটার এলাকা পরিবর্তনে করতে কি কি ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র প্রয়োজন? জানুন কিভাবে NID Form 13 পূরণ করে করবেন এবং ভোটার এলাকা পরিবর্তনে কি কি ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।
বিভিন্ন কারণে আপনার বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন হতে পারে। বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন হলে যারা স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হয়েছেন তাদের ভোট দেওয়ার জন্য প্রত্যেকবার স্থায়ী ঠিকানায় যেতে হয়। তবে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়ে স্থায়ী ঠিকানায় সব সময় থাকা সম্ভব হয় না।
চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা পড়ালেখা ইত্যাদি কারণে বর্তমান ঠিকানা বদল হয়। একই সাথে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার এলাকাও বদল করার প্রয়োজন হয়।এই ভোগান্তির জন্য অনেকে ভোটই দিতে পারে না। ভোট দেওয়ার জন্য অনেকে স্থায়ী ঠিকানা থেকে বর্তমান ঠিকানার ভোটার হয় । ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা অর্থাৎ ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হয়।
ভোটারের এলাকা পরিবর্তনের সঠিক নিয়ম জানা না থাকলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই আজকের পোস্টে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার সঠিক নিয়ম এবং এলাকা বদল করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কি কি লাগে
ভোটার এলাকা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সম্পর্কে NID Transfer Form এ বিস্তারিত তথ্য আছে। তাও বোঝার সুবিধার্থে নিম্নে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি তালিকা দেয়া হলো :-
- জাতীয় পরিচয় পত্র ( NID ) কার্ড এর কপি
- বাড়ি ভাড়ার রশিদ বা বিদ্যুৎ / পানি / কর রশিদ
- NID Form 13
- নতুন এলাকার নাগরিকত্বের সনদ
- NID Form 13 দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধির ( কাউন্সিলর / চেয়ারম্যান ) জাতীয় পরিচয় পত্র ( NID ) নাম্বার সহ সিল ও স্বাক্ষর।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম
আপনার ভোটার এলাকা স্থানান্তর করার জন্য প্রথমেই উল্লেখিত NID Form 13 ডাউনলোড করে প্রিন্ট করিয়ে নিতে হবে। প্রিন্ট করা ভোটার এলাকা পরিবর্তনের NID Form 13 সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে এবং বর্তমান এলাকার উপজেলা নির্বাচন অফিসে উল্লিখিত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ ফর্মটি জমা দিতে হবে। ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করে থাকলে ১৫ থেকে ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে ভোটারের এলাকা স্থানান্তর হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে আপনি বর্তমানে যে এলাকার সেই এলাকার উপজেলা নির্বাচন অফিসে আপনাকে নিজে যেয়ে ভোটার এলাকা স্থানান্তর ফর্ম NID Form 13 পূরণ করে জমা দিতে হবে। আবেদনটি অনুমোদন হলেই পরবর্তীতে এলাকার ভোটার তালিকায় আপনাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরবর্তী নির্বাচন থেকে আপনি উক্ত এলাকায় ভোট দিতে পারবেন।
এক্ষেত্রে মনে রাখবেন ভোট দেওয়ার এলাকা পরিবর্তনের পর আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা স্থানান্তর হবে না এবং আপনাকে কোন নতুন সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ডও দেওয়া হবে না। তবে যদি আপনার সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ডের প্রয়োজন হয় তাহলে NID Card Re-Issue আবেদন করতে হবে।
যেভাবে ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩ পূরণ করবেন
ভোটার এলাকা স্থানান্তরের জন্য প্রথমেই উল্লেখিত NID Form 13 ডাউনলোড করে প্রিন্ট করিয়ে নিন। প্রিন্ট করিয়া না করতে চাইলে এডিটরের সাহায্যে কম্পিউটারের মাধ্যমেও তথ্য পূরণ করে প্রিন্ট করিয়ে নিতে পারেন। নিম্নে কিভাবে এলাকা পরিবর্তন এর NID Form 13 পূরণ করবেন এবং অন্যান্য ডকুমেন্টস করবেন তা ধাপে ধাপে দেখানো হলো :-
ধাপ ১ :- আবেদনকারীর তথ্য প্রদান
ভোটার এলাকা পরিবর্তন এর NID Form 13 এ প্রথমেই আবেদনকারের ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে। ফর্মটির প্রথম ক্রমিকে বাংলায় আবেদনকারের সম্পূর্ণ নাম লিখতে হবে। ফর্মের দ্বিতীয় ক্রমিকের আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র ( NID ) নাম্বার দিতে হবে। এবং ফর্মের তৃতীয় ক্রমিকে আবেদনের জন্ম নিবন্ধনে থাকা সঠিক জন্ম তারিখ লিখতে হবে।
ধাপ ২ :- বর্তমান ঠিকানা প্রদান
আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া সম্পূর্ণ হলে চতুর্থ ক্রমিকের আবেদনকারীর বর্তমান ভোটার এলাকার ঠিকানা দিতে হবে। বর্তমান ভোটার এলাকার নাম, ভোটার এলাকার নাম্বার, উপজেলার নাম, জেলার নাম, গ্রামের বা রাস্তার নাম, বর্তমান বাসার হল্ডিং নাম্বার দিয়ে ফর্মটি পূরণ করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে নিজের ভোটার নাম্বার এবং ভোটার এলাকা নাম্বার সঠিকভাবে জানা না থাকলে না লেখাই ভালো। যদি সম্ভব হয় তবে ভোটার অফিস থেকে ভোটার এলাকা নাম্বার জেনে নিয়ে তারপর লিখুন। গ্রাম বা রাস্তা ও ভোটার এলাকার নাম একই হয়। তবে মাঝে মাঝে আলো দেওয়া হতে পারে। একই হয়ে থাকলে ভোটার এলাকার নামের স্থানে গ্রাম বা রাস্তার নাম লিখতে হবে।
ধাপ ৩ :-পরিবর্তিত ঠিকানা প্রদান
ফর্মের পঞ্চম ক্রমিকে পরিবর্তিত ভোটার এলাকা অর্থাৎ বর্তমান এলাকা থেকে স্থানান্তর হয়ে নতুন যে ঠিকানায় আসতে চান সেই এলাকার ঠিকানা লিখতে হবে। ফর্মে প্রথমে পরিবর্তিত ভোটার এলাকার জেলার নাম এবং উপজেলার নাম লিখতে হবে। এরপর ইউনিয়ন / সিট কর্পোরেশন / পৌরসভা / ক্যান্ট এর মধ্যে যার মাধ্যমে আপনি স্থানান্তর হবেন ফর্মে সেটি নির্বাচন করে দিন এবং পাশে ইউনিয়ন / সিটি কর্পোরেশন / পৌরসভা / ক্যান্ট বোর্ডের নাম লিখে দিন।
অতঃপর আপনার নতুন ভোটার এলাকার ওয়ার্ড নম্বর, ভোটার এলাকার নাম্বার, ভোটার এলাকার নাম, গ্রামবার রাস্তার নাম এবং নম্বর, আপনার মোবাইল নাম্বার, ডাকঘর এবং পোস্ট কোড লিখুন। এক্ষেত্রে ভোটার এলাকা ও গ্রামের নাম আলাদা আলাদা হতে পারে। সঠিক নাম জানা না থাকলে এলাকার জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে ভোটার এলাকার সঠিক নাম নিশ্চিত হয়ে নিন। পরিবর্তিত ভোটার এলাকার তথ্য ভুল হলে ভুল ঠিকানায় ভোটার এলাকা স্থানান্তর হয়ে যেতে পারে। তাই সাবধানে ও সতর্কতার সাথে পরিবর্তিত ভোটার এলাকার তথ্য পূরণ করুন।
পরিবর্তিত ভোটার এলাকা এর ঠিকানা লেখা শেষ হলে ৬ নং ক্রমিকে পরিবর্তিত ভোটার এলাকায় আপনি কত দিন যাবত ছিলেন বা পরিবর্তিত ভোটার এলাকা আপনার জন্মস্থান কিনা তা নির্বাচন করে দিতে হবে।
ধাপ ৪ :- ভোটার এলাকা স্থানান্তর এর কারন সাবমিট
সর্বশেষে ফর্মের সপ্তম ক্রমিকে ভোট দেওয়ার এলাকা পরিবর্তনের কারণ বলতে হবে। যেমন হতে পারে এতিই আপনার স্থায়ী ঠিকানা বা চাকরি, বৈবাহিক সূত্রে বা ঐরকম কোন কারনে ভোটার এলাকার স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়েছে। এই ক্রমিকে আপনি মূলত যে কারণে ভোট দেওয়ার এলাকাস্থানান্তর করতে চান তা লিখবেন।
ধাপ ৫ :- আবেদনকারীর ও সনাক্তকারীর স্বাক্ষর প্রদান
ফর্মের প্রথম পাতা পূরণ করা সম্পূর্ণ হলে দ্বিতীয় পাতায় প্রথমে আবেদনকারী স্বাক্ষরের স্থানে আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ডে যেভাবে আবেদনকারীর স্বাক্ষর আছে ঠিক তেমন করেই আবেদনকারীকে স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষর আলাদা হলে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে।
আবেদনকালের পর আবেদনকারীকে সনাক্ত করে স্বাক্ষরের স্থানে এলাকার জনপ্রতিনিধিকে স্বাক্ষর করতে হবে। সনাক্তকারীকে অবশ্যই স্বাক্ষরের সাথে এন আই ডি নাম্বার এবং সিল ব্যবহার করতে হবে। সনাক্তকারীর বদলে সাধারণ আবেদনকারী স্বাক্ষর করে ফেললে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফি
সাধারণভাবে ভোটার এলাকা পরিবর্তনশীল হল ২৩০ টাকা। এখানে ২০০ টাকা হল মূল ফি এবং বাকি ৩০ টাকা ১৫% ভ্যাট হিসেবে নেওয়া হয়। উক্ত ফি চাইলে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে জমা দেওয়া যায়।
বিকাশের মাধ্যমে ভোটার এলাকা পরিবর্তনশীল জমা দেওয়ার জন্য প্রথমে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে লগইন করুন। অ্যাপ থেকে Pay Bill > Government Fee > NID Service অপশনে যেতে হবে। আবেদনের ধরন NID Info Correction নির্বাচন করে nid নাম্বার দিয়ে বিল প্রদান করতে পারবেন।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কতদিন সময় লাগে
সাধারণত সবকিছু ঠিক থাকলে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। তবে এর থেকে বেশি সময়ও লাগতে পারে। দ্রুত ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সময় মতন জমা দিন। আবেদন করার সাত দিন পর খোঁজ নিয়ে দেখুন।
মাঝে মাঝে সময় অনেক বেশি লাগতে পারে। তবে ৩০ দিনের বেশি কোন মতেই লাগার কথা না।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার পর এনআইডি কার্ড সংগ্রহ
ভোটার এলাকা পরিবর্তন আবেদন অনুমোদন হলে আপনি পরিবর্তিত এলাকার ভোটারদের অন্তর্গত হয়ে যাবেন। এবং পরবর্তী নির্বাচন থেকে ভোট দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন ভোটার এলাকা পরিবর্তন করলে আপনি নতুন কোন ভোটার আইডি কার্ড পাবেন না। নতুন ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন হলে অনলাইনে NID Card Re-Issue আবেদন করে এনআইডি কার্ড তুলতে হয়।
শেষ কথা
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি, আপনি কিভাবে আপনার ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে পারেন। আমরা বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি যেগুলো আপনাকে সহজেই ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।
আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে আরো পোস্ট পড়তে চান তাহলে আপনি আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন এবং আপনি আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের সাথে কমেন্টে শেয়ার করতে পারেন।
FAQ’s
ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফি ২০০ টাকা এবং ভ্যাট ৩০ টাকা। ১৫% ভ্যাট সহ মত ২৩০ টাকা
ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফি বিকাশ এর মাধ্যমে পরিষদ করা সম্ভব।
বিকাশের মাধ্যমে ভোটার এলাকা পরিবর্তনশীল জমা দেওয়ার জন্য প্রথমে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে লগইন করুন। অ্যাপ থেকে Pay Bill > Government Fee > NID Service অপশনে যেতে হবে। আবেদনের ধরন NID Info Correction নির্বাচন করে nid নাম্বার দিয়ে বিল প্রদান করতে পারবেন।
না। ভোট দেওয়ার এলাকা পরিবর্তন করলে নতুন সংসশোধিত ভোটার আইডি কার্ড পাবেন না।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন হলে অনলাইনে NID Card Re-Issue আবেদন করে এনআইডি কার্ড তুলতে হবে।